আমাদের কমিশনের মেয়াদ রয়েছে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। তার মধ্যেই বিদ্যুতের দামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে চান বলে জানিয়েছে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।
রোববার (৮ জানুয়ারি ) রাজধানীর বিয়াম অডিটরিয়ামে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানির সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। শুনানিতে অংশ নিয়ে বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান ও কামরুজ্জামান। কোন পক্ষের আরও কোন বক্তব্য কিংবা সম্পুরক কাগজপত্র থাকলে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়।
তিনি আরও বলেন, সবাইকে খুশি করা কঠিন, তবে ভোক্তাও যাতে ক্ষুব্ধ না হয়, আবার ইউটিলিটিও চলতে পারে সেভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত কমিশনের আদেশে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি, হয়তো মুনাফা কিছুটা কমেছে। কমিশনের দেওয়া আদেশে এখনও কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায় নি।
প্রসঙ্গক্রমে বলেন, মাথাপিছু আয় কোন দেশের সার্বিক উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয় না। অনেকগুলো সুচকের মধ্যে একটি। গোটা পরিবেশ নিয়ে উন্নয়ন। আমরা হারার জাতি না, আমরা জয়ী হবই। শুধু দরিদ্র লোক না, অনেকে ভালো চাকরি ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছে, নিশ্চয় তার কোন অশান্তি রয়েছে। আমরা চাই তাদের অশান্তি দুর করতে।
চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭১ সালে বাজারে কাপড় ছিল কিন্তু কেনার লোক ছিল না। দাম বাড়িয়ে নিলেন কিন্তু দেখা গেলো শিল্প বন্ধ হয়ে গেলো, তাহলে কি হবে। ভোক্তার দিকটাও বিবেচনার নিতে হবে। সাবধানে পা ফেলতে হবে আগামী দুই বছর। ক্যাবের প্রতিনিধি শামসুল আলম ভোক্তার পক্ষে কথা বলে গেছেন। ন্যায় ও ন্যায্যতার কথা বলেছেন, দুর্নীতি বন্ধের কথা বলেছেন। প্রত্যেকে তাদের পক্ষ থেকে বলেছে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বিষ্ময় প্রকাশ করে
বলেন, মিটার ভাড়া আবার কিসের। যার যে রকম সুবিধা সেভাবে চলতে পারে না, একটি সিস্টেমের মধ্যে চলতে হবে।বিতরণ কোম্পানিগুলো সকলেই মুনাফায় রয়েছে অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী।
সৌর বিদ্যুতের জন্য বিপিডিবি ১০ টাকায় চুক্তি করছে। তখন ওজোপাডিকো ১৯ থেকে ২১ টাকা দরে কিনছে। এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে বিইআরসির কিছুই করার নেই। এটা দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির আওতায় চুড়ান্ত হয়।
উন্নত বিশ্বে বিইআরসি সবকিছু রেগুলেট করে।
বিষয়টি কতটা ন্যায্য এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাবতা পালন করেন চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বিবেচনায় পাইকারি দর বাড়ানো হয়েছে। ভর্তুকির পরিমাণ বিগত বছরের ভর্তুকিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সরকার যদি ভর্তুকি না দিতে চায় সেভাবে করতে হবে।
পিডিবিকে ৩ দিনের মধ্যে সরকারের অবস্থান জানান দেওয়ার নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান।
ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, এক পশু দুইবার কোরবানি করা যায় না। সেই কাজটিই করছে বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলো। গ্রাহকরা নিজে টাকা দিয়ে মিটার কিনছে আবার বছরের পর বছর ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে। অনেক বিকল্প রয়েছে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে সমন্বয় করার। সারাবিশ্ব ২০২৩ সালকে মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জের বছর মনে করা হচ্ছে। সে রকম একটি সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো চরম নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করতে পারে। এতে সরকারের ক্ষতি হতে পারে।
গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৫.১৭ টাকা থেকে ৬.২০ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। বিপিডিবি ইউনিট প্রতি বর্তমান দর ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার আবেদন করেছিল। সেই প্রস্তাবের উপর গণশুনানি নেওয়া হয় গত মে মাসের ১৮ তারিখে। আর ১৩ অক্টোবর বিপিডিবি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেন বিইআরসি। রিভিউ আবেদন জমা দিলে দাম বাড়িয়ে দেয় বিইআরসি। পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পরপরেই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন নিয়ে এসেছে। বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি গ্রাহক পর্যায়ে ১৫.৪৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ দিয়েছে। অন্যদিকে পিজিসিবি সঞ্চালন চার্জ ১১৭ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপরীতে টেকনিক্যাল কমিটি ১৩.৯৯ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে।