হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দু’দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোদি। বাণিজ্য থেকে অভিবাসন, ভিসা নীতিসহ একাধিক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে। ট্রাম্প ছাড়াও ইলন মাস্ক ও ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন মোদি।
তবে ট্রাম্প ও মোদির বৈঠকে বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয় তারা এড়িয়ে গেছেন। এসব বিতর্কিত বিষয়ের মধ্যে আছে ট্রাম্পের ঘোষিত ‘পারস্পরিক শুল্কনীতি’, যার মাধ্যমে তিনি মার্কিন পণ্যের ওপর অন্যান্য দেশ যে হারে শুল্ক আরোপ করে, ঠিক সেই হারেই সেসব দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছেন। এছাড়া মানবাধিকার এবং সংখ্যালঘু নিপীড়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকেও তারা এড়িয়ে গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনসংক্রান্ত উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কমই গুরুত্ব পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ক্রমাগত বেড়েছে। চীনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আলোচিত এই বৈঠকের পর কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে বৈঠকের চারটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ দিকগুলো হলো-
বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের ছাড়
ট্রাম্পের শুল্কের মুখে দেশে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে, এই আশঙ্কায় বিশ্বনেতাদের অনেকেই ট্রাম্পের দাবি মেনে নিচ্ছে বা বিভিন্ন খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার মোদিও এমন কিছু প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন।
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতির জন্য ভারতের আরোপ করা শুল্ককে দায়ী করেছেন ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতের অন্যায্য, কঠোর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এসব শুল্ক ভারতের বাজারে মার্কিন পণ্য প্রবেশ বেশ কঠিন করে তুলেছে। এটি সত্যিই একটি বড় সমস্যা।’
বৈঠকের পর এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে একটি চুক্তির ঘোষণা দেন দুই নেতা। এই চুক্তির মধ্যে মহাকাশ ভ্রমণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং জ্বালানি উৎপাদনে অংশীদারত্বের বিষয়গুলো থাকবে।
মোদি বলেন, ‘আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণেরও চেয়েও বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।’
ট্রাম্প আরও জানান, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি পণ্য আমদানি বাড়াবে ভারত। প্রধানমন্ত্রী এবং আমি জ্বালানি সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছি, যা যুক্তরাষ্ট্রকে আবার ভারতের শীর্ষ তেল-গ্যাস সরবরাহকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের মতো মিত্রদের সংযুক্ত করবে এমন একটি আন্তর্জাতিক অবকাঠামো প্রকল্পেরও ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য পথগুলোর একটি গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছি। এটি ভারত থেকে ইসরায়েল, ইতালি হয়ে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত আসবে। এই প্রকল্পের অধীনে আমাদের অংশীদারদের বন্দর, রেলপথ এবং সমুদ্রের নিচে ক্যাবল দিয়ে সংযুক্ত করবে।’