দেশজুড়ে ফের উদ্বেগজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চলতি মাসের গত ১৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গত ৫ মাসের চেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ২ ও মে মাসে ২ জন। তবে মার্চ মাসে কেউ মারা যাননি। আর চলতি জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৬ জন মারা গেছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ২৯ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগী বেশি আসছে হাসপাতালগুলোতে। বৃহস্পতিবারও ২৮৫ রোগীর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৩৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে ঢাকার বাইরে চট্রগ্রামেও এ বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৩৭ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে ঢাকার ৫৩ টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৭৬৬ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭১ জন ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত সারাদেশে ৪ হাজার ৮৭ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। মানুষের অসচেতনতা ও গৎবাঁধা কার্যক্রমের কারণেই এ সমস্যার কোনও সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।
ডেঙ্গু নিয়ে সামনে আরেকটা বড় দুর্যোগ অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, আগে এই রোগটিকে শহুরে রোগ বলা হলেও ২০২২ সালের পরিসংখ্যান বলছে রোগী বাড়ছে রাজধানী ঢাকার বাইরেও। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও। গেল বছর মোট ৬২ হাজার ৩৮২ ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরের রোগী ছিল ২৩ হাজার ১৬২ জন। এর বাইরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিতে যা ছিল ১৫৩৫২ জন। এ বছরও ঢাকা শহর ও ঢাকার বাইরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রোববার (১৮ জুন) থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) দুই বেলা লার্ভিসাইডিং এবং ফগিংয়ের মতো রুটিন কার্যক্রমের বাইরে স্কাউট ও বিএনসিসির সদস্যদের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া কোনও প্রকার কীটনাশক ছাড়াই বিটিআই ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হলেও বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ডেঙ্গু বা এডিস মশা পরিষ্কার ও ময়লা দু’ধরণের পানিতে জন্মায়। কেবল দিনে নয়, এরা রাতেও কামড়াতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও এমিরেটাস প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেছেন, রক্তের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে কমে গেলে, শরীরে রক্ত দিতে হবে এমনটা নয়। বরং রক্তপাত হলেই রক্ত গ্রহণ করা যাবে। তবে সবকিছুই করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে। তাই লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসক এবং হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ তার।
এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন অহমেদ বলেছেন, জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে। একই সঙ্গে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।