আটলান্টিকসংবাদ ডেস্ক: গত ২৭ই জুন বৃহস্পতিবার, ২০২৪ আটলান্টিক সিটির স্থানীয় একটি রেষ্টুরেন্টে বাংলাদেশের তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায়  প্রধান অতিথি হিসাবে  উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত  বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম এবং বিশেষ অতিথী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের সহধর্মীনি ফাতেমা সালাম । নিউ জার্সি ষ্টেট সাউথ বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভার সভাপতিত্বে ছিলেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ মোঃ কাউছার এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারন সম্পাদক এম এম রহমান বাবুল । অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন  নিউ জার্সি ষ্টেট সাউথ বিএনপির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক এম এ রেজা।

বিএনপির অন্যতম নীতি নির্ধারক আবদুস সালামকে দীর্ঘদিন পর কাছে পেয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী।গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করার আবেদন জানালে আবদুস সালাম প্রায় ৩০ মিনিট নেতা-কর্মীদের প্রশ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

বিভিন্ন প্র্রশ্নের জবাবে  আবদুস সালাম বলেন দেশ এবং বিদেশে বসবাসরত সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিই চাই  অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবিলম্বে পদত্যাগ।  গ্লোবাল  রাজনীতির মেরুকরনের পরিপেক্ষিতে শুধুমাত্র ভারত, চীন এবং রাশিয়া  ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশই এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চাইনা বলে তিনি উল্লেখ করেন। আপনারা সবাই জানেন দেশ এখন ভারতের অঙ্গরাজ্য পরিনত হয়েছে,ব্যাংকগুলো সব খালি হয়ে যাচ্ছে,দেশে কোন আইনের শাসন নাই, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজির দূনীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক এবং সে ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগের প্রশয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

এধরনের পরিস্থিতি কোন স্বাধীন দেশে চলতে পারেনা। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন। আপনাদের মনে আছে নিশ্চয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিয়েছিলেন কিন্তু অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা না থাকায়  জোর করে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা  নিজেরা সন্ত্রাসী কাজকর্ম করে তাদের ছবি গুলো বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসীদল বানানোর প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজেরাই নৈরাজ্য, নাশকতা, সন্ত্রাস, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও করে তার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করার পর সব গোমর দেশের জনগণ এবং বিদেশীদের সামনে ইতোমধ্যেই ফাঁস হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নানা কারসাজি করে যাচ্ছ।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন গত ২৮ অক্টোবর সমাবেশের প্রাক্কালে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন, বিএনপি সমাবেশ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হেফাজতের পরিণতি হবে, অর্থাৎ হেফাজতের আলেম-ওলামাদের রক্তে ঢাকার রাস্তা যেমন ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল, ঠিক তেমনি পরিণতি করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন । আর দেশবাসী সেটি স্বচক্ষে দেখলো যে কি ভয়ংকর পরিণতি ঘটানো হয়েছিল ওবায়দুল কাদের এবং তাদের সাজানো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি বলেন  বিএনপি একটি গনতান্ত্রিক দল, সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্যের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়না।ভোটের মাধ্যমে বিএনপি  ক্ষমতায় যাবে। তিনি বলেন ২৮ তারিখে সমগ্র দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল কিন্তু আমরা বুলেটের মাধ্যমে অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা কখনও ভাবিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন হাইকোটের বিচারপতির বাসার সামনে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করে,জালাও পোড়াও শুরু করে এবং বৃষ্টির মত গুলি করে সবকিছু চত্রভঙ্গ করে দেয়। আওয়ামীলীগকে ফ্যাসিস্ট এবং রক্ত পিপাসু আখ্যা দিয়ে বলেন জনগনের সকল দাবী উপেক্ষা করে, ভোটারবিহিন নির্বাচন করা একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষ্যেই সম্ভব ।

সালাম বলেন; আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা ও লজ্জা দিনে দিনে সমানহারে কমছে। একটি দল নিজের কর্মদোষে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হওয়ার এটা বড় লক্ষণ। মানুষের স্মতস্ফুর্ত প্রত্যাখ্যানে এবারের প্রহসনমূলক নির্বাচন অতীতের সকল ইতিহাসকে ম্লান করে ফেলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষের এই মৌন অনাস্থা একসময় বিক্ষোভের অগ্নিস্ফুলিংগে পরিণত হবে।

তিনি বলেন, সরকার সারাক্ষণ অস্থিরতায় থাকে। এই বুঝি তাদের পতনের হুইসেল বেজে উঠল। এই ভয় থেকেই সরকার বিএনপির একের পর এক নেতাকে কারাগারে নিচ্ছে। কিন্তু এসব গ্রেপ্তার করে পতন ঠেকানো যাবে না। মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই মানে মানে কেটে পরার আহবান জানান।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালাম বলেন, সারাদেশ দূর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। বাজার সিন্ডিকেট করে সরকার দলীয় ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্যে আগুন ধরাচ্ছে। সরকারের এদিকে কোনো নজর নেই। নজর শুধু বিএনপি দিকে। কারণ, দূর্নীতিবাজরা তাদের রক্ষা করবে আর জনতা অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর পতন ঘটাবে। বিএনপি হচ্ছে জনগণের দল। তাই সরকার দূর্নীতি দমন না করে বিএনপি দমনে ব্যস্ত।

তিনি বলেন, বিএনপির একটি সমাবেশ ডাকলেই ওবায়দুল কাদেরের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। অথচ ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে, শেয়ার বাজার লুট হয়ে যাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে এতে তাদের কোনো মাথা নেই।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেন, গনতন্ত্রের কথা বললে, দেশের মানুষের কথা বললে, ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন করলে জেল-জুলুমের ভয় সামনে আসে। এখনতো এক মামলায় ধরে আরেক মামলায় জড়ানো হয়। ধরার সময় মামলা না থাকলে বলা হয় অপেক্ষা করুন জানতে পারবেন। এ ধরনের নাটক যারা করছে, তারও একটা শেষ আছে। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত জুলুম-নির্যাতনের জন্য ক্ষমতাসীনদের এক সময় আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমানো যাবে না। ধমক দিয়ে আন্দোলন ঠেকানো যায় না। সরকারের জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, গনতান্ত্রিক রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি আজ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন রাজপথে বলিষ্ট ভূমিকা পালনের মাধ্যমেই ফ্যাসিষ্ট এবং বিনা ভোটের এ সরকারের সকল ষড়যন্ত্র ও জুলুমকে রুখে দিতে হবে ।

সংগঠনের  নেৃতৃবৃন্দ নিউ জার্সি ষ্টেট সাউথ বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোঃ কাউছারের গত ২০ বছরের যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কার্যক্রম বিবেচনা করে সৈয়দ মোঃ কাউছারকে কেন্দ্রীয় কমিটির পদ দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।

সভাশেষে দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদ আল হেরার খতিব জনাব আযীম উদ্দিন। সংগঠনের পক্ষ থেকে দলের সভাপতি সৈয়দ মোঃ কাউছার এবং রহমান বাবুল দোয়া মাহফিল এবং সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।